বাক্য কাকে বলে

বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যের কি কি শর্ত থাকা প্রয়োজন ?বাক্যের প্রকারভেদ ?বাক্য রূপান্তর কর?

বাক্য বিভিন্ন পদ সমষ্টি দ্বারা গঠিত হয় ঠিকই কিন্তু পদের সম্পর্কের মধ্যে অব্যয় থাকা আবশ্যক।
সংজ্ঞা : কতগুলি পথ পর পর বসে যখন মনের ভাব বা অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে।
যেমন- মাহি গান গাইছে।
যে সুবিন্যস্ত পদ সমষ্টি দিয়ে কোন বিষয়ে বক্তার মণেরভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় তাকে বাক্য বলে।

Table of Contents

একটি সার্থক বাক্যের শর্ত সমূহ :

ক: আকাঙ্ক্ষা :-_বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ জানার যা ইচ্ছা তাই হল আকাঙ্ক্ষা।
খ: আসক্তি :- বাক্যে শব্দ গুলো এমনভাবে থাকবে যাতে মনের ভাব বাধা প্রাপ্ত না হয়ে প্রকাশ পাবে।
গ: যোগ্যতা :- বাক্য স্থিত পদ সমূহের পরস্পরের সঙ্গে অর্থগত এবং ভাব কত মেলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। (বাক্যে যোগ্যতা অর্জন করার জন্য যে শর্ত সমূহ জড়িত থাকে এবং দোষে পরিণত হয় – দুর্বোধ্যতা বর্জন উপমার ভুল প্রয়োগ গুরুচণ্ডালী দোষ যথার্থ শব্দ প্রয়)।

বাক্যের_শ্রেণীবিভ্যাক
বাক্যের_শ্রেণীবিভাগ

গঠনগত দিক থেকে বাক্য কয় প্রকার ও কি কি?

গঠনগত দিক থেকে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় –
(১) সরল বাক্য
(২) জটিল বাক্য এবং
(৩) যৌগিক বাক্য

(১) সরল বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্য একটি মাত্র কর্তা বা উদ্দেশ্য এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে সরল বাক্য বলে
যেমন –
• (ক) সুমন মাঠে বল খেলছে।
• (খ)সে রোজ কাযে যায়।

(২) জটিল বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্য একটি প্রধান অংশ এবং এক বা একাধিক অপ্রধান অংশ থাকে তাকে বলে জটিল বাক্য।
জটিল বাক্য স্বাধীন অংশ বা প্রধান অংশ এবং অপ্রধান অংশ সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে। এই সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলি হল – যে-সে, যেমন-তেমন, যদি-তবে, যেখানে-সেখানে, যেহেতু-সেহেতু, ইত্যাদি।
উদহারণ দিয়ে বোঝানো যাক –
• (ক) যখন তুমি আসবে তখন আমি যাব।
• (খ) যেমন কর্ম তেমন ফল।
• (গ) যে পরাশুনা করবে সে প্রথম হবে।

(৩) যৌগিক বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্য দুই বা একাধিক সরলবাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে যৌগিক বাক্য বলে
যেমন –
• (ক) সে রোগা কিন্তু শক্তিশালী।
• (খ) বিদ্যালয়ে যাব এবং মন দিয়ে পড়া শুনবো।

অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ অর্থ অনুসারে বাক্য পাঁচ প্রকার –
• (১) নির্দেশক বাক্য
• (২) প্রশ্নবোধক বাক্য
• (৩) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
• (৪) বিস্ময়সূচক বাক্য এবং
• (৫) ইচ্ছাসূচক বাক্য

(১) নির্দেশক বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্যে কোন বিষয় সম্পর্কে বিবৃতি বা বর্ণনা দেওয়া হয় তাকে নির্দেশক বাক্য বলে। যেমন –
• কাকলি ভালো মে।
• বসন্তে কোকিল ডাকে।
• পূর্ণিমার রাত কালো নয়।
নির্দেশক বাক্য ২ প্রকার – ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক এবং নেতিবাচক বা না-সূচক

ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু স্বীকার করা হয় বা ্মেনে নেওয়া হয়, তাকে ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক বাক্য বলা হয়।

যেমন –
• আজ খুব শীত।
• সে আসবে।

নেতিবাচক বা না-সূচক বাক্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্য দিয়ে কোনো কিছু অস্বীকার করা হয়, তাকে নেতিবাচক বা না-সূচক বাক্য বলে। না, নয় ইত্যাদি দ্বারা অস্বীকার করা বোঝায়।

যেমন –
• আজ মনটা ভালো নেই।
• সে এখন এখানে থাকে না।

২) প্রশ্নবোধক বাক্য কাকে বলে?

যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন –
• তুমি কি আসবে?
• তুমি কি যাবে ?

৩) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য কাকে বলে?

যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, নির্দেশ, অনুরোধ, উপদেশ, প্রভৃতি দাওয়া হয়, তাকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে। এই ধরণের বাক্যে উদ্দেশ্য বা কর্তা ‘ তুমি ‘, ‘ তোমরা ‘ প্রায় উহ্য থাকে। যেমন –
• মন দিয়ে কাজ করো।
• এখন যাও।

৪) বিস্ময়সূচক বাক্য কাকে বলে?

বিস্ময়সূচক বাক্য যে বাক্যের দ্বারা বিস্ময় বা আবেগ প্রকাশিত হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বা আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন –
• কি আনন্দ।
• এখানে কত সুখ!

৫) ইচ্ছাসূচক বাক্য কাকে বলে?

যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের কামনা, বাসনা, প্রার্থনা, ইচ্ছা, ইত্যাদি প্রকাশিত হয়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন –
• ভাল থাকো।
• তোমার কল্যাণ হোক।

বাক্য পরিবর্তন বা বাক্য রূপান্তর

বাক্য রূপান্তর।
অর্থের কোনোরূপ পরিবর্তন না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নামই বাক্য রূপান্তর।

১। সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর

মিশ্র বাক্যের সংযোগচিহ্ন : জবে- তবে, যে- সে, যারা-তারা, যে-সেই, যেই-সেই, যে-তাকে/তারা, যা-তা, যেসব-তাদের/যেসকল-তারা, যাদের-তাদের/তারাই, যে-সেটি
সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিণত করতে হলে সরল বাক্যের কোনো অংশকে খণ্ডবাক্যে পরিণত করতে হয় এবং উভয়ের সংযোগ বিধানে সম্বন্ধসূচক (যদি, তবে, যে, সে প্রভৃতি) পদের সাহায্যে উক্ত খণ্ডবাক্য ও প্রধান বাক্যটিকে পরস্পর সাপেক্ষ করতে হয়। যেমন :
১. সরল বাক্য : ভালো ছাত্ররা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
মিশ্র বাক্য : যারা ভালো ছাত্র তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
২. সরল বাক্য : তার দেখা মাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।
মিশ্র বাক্য : যেই তার দেখা পেলাম সেই আমরা প্রস্থান করলাম।
৩. সরল বাক্য : ভিক্ষুককে দান কর।
মিশ্র বাক্য : যে ভিক্ষা ্মাগে তাকে দান কর।

২। মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর

মিশ্র বাক্যের অপ্রধান খণ্ডবাক্যটিকে সংকুচিত করে একটি পদ বা একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়। যেমন :

১. মিশ্র বাক্য : যতদিন জীবিত থাকব ততদিন এ উপকার স্বীকার করব।
সরল বাক্য : আজীবন এ উপকার স্বীকার করব।
২. মিশ্র বাক্য : যে সব পশুরা মাংস ভোজন করে তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল বাক্য : মাংসভোজী পশু অত্যন্ত বলবান।

৩। সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্যের সংযোগচিহ্ন : এবং, কিন্তু, তথাপি, তবে, তাই ।
সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিণত করতে হলে সরল বাক্যের কোনো অংশকে নিরপেক্ষ বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। এবং যথাসম্ভব সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয়ের প্রয়োগ করতে হয়। যেমন :
১. সরল বাক্য : তিনি আমাকে ১০ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্য : তিনি আমাকে ১০টি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন।
২. সরল বাক্য : পরীক্ষায় পাশ করার জন্য এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত।
যৌগিক বাক্য : এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।
৩. সরল বাক্য : আমি বহু কষ্টে বর লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি ফলে বর লাভ করেছি।

৪। যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে

১. বাক্যসমূহের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হবে।
২. অন্যান্য সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিবর্তন করতে হয়।
৩. অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।
৪. কোনো কোনো স্থলে একটি বাক্যকে হেতুবোধক বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।
যেমন :
১. যৌগিক বাক্য : সত্যি কথা বলিনি তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য : সত্যি কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
২. যৌগিক বাক্য : তার বয়স বেরেছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল বাক্য : তার বয়স বারলেও বুদ্ধি হয়নি।

Tags: No tags

One Response

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *